ইসুবগুলের ভুসির উপকারিতা

ইসবগুল উপমহাদেশের সবাই চেনে। এর নানাবিধ উপকারিতা সম্পর্কেও আমরা জানি । নামের সঙ্গে ‘গুল’ আছে বলে অনেকে ভাবতে পারে , হয়তো কোনো ক্ষুদ্র ফুলের পাপড়ি হবে। কিন্তু এর সম্পর্ক বীজের সঙ্গে ,ফুলের সঙ্গে নয়। সঠিকভাবে বলতে গেলে বীজের খোসার সঙ্গে, যাকে আমরা ইসবগুলের ভুসি বলে জানি। বিদেশি বাজারে এটা সিলিয়াম হাস্ক (Psyllium husk) হিসেবে পরিচিত। গ্রিক ‘সিলা’ (psylla) অর্থ একধরনের মাছি, ডানাহীন ফ্লি—মাছি। ইসবগুলের বীজ দেখতে অনেকটা ফ্লি—মাছির মতো বলে ইংরেজিতে এই নামে পরিচিত।

ইসুবগুল ‘গুল্ম’ জাতীয় গাছ। এই গাছের ফুল ছোট,পাপড়ি সূক্ষ হয়। ইসুবগুল গাছের উচ্চতা দেড়-দুই ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ফল দুইকোষ বিশিষ্ট, ৭-৮ মিলিমিটার লম্বা হয় এবং ফলের ভিতরে ৩ মিলিমিটার লম্বা বীজ থাকে। বীজ দেখতে নৌকার মতো এবং এর খোসায় পিচ্ছিল হয়। এটা এক ধরনের রবিশস্য।

ইসবগুলের পুষ্টিগুণঃ

১ টেবিল চামচ ইসবগুলে আছে

ক্যালরি ৫৩%
ফ্যাট ০%
সোডিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম
কারবোহাইড্রেট (শর্করা) ১৫ গ্রাম
ক্যালশিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম
আয়রন (লোহা) ০.৯ মিলিগ্রাম
ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা কি ?
Isabgoler Bhusi উপকারীতা বলে শেষ করা যাবে না।5 – 10 গ্রাম Isabgoler Bhusi নিয়ে 1 কাপ ঠাণ্ডা কিংবা গরম পানিতে 30 মিনিটের মত সময় ভিজিয়ে রাখুন এবং খাওয়ার আগে 2 থেকে 3 চামচ চিনি মিশিয়ে নিন এবং সকালে খালি পেটে অথবা রাতে শোয়ার আগে খেতে পারেন তাহলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। ইসপগুলের ভুষি তে প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা আমাদের পেটের বিভিন্ন রোগ ও কোষ্ঠকঠিন্যতা দুর করতে সহায়তা করে। যারা দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকঠিন্যতায় ভুগছেন তারা ২ মাস নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকঠিন্য ১০০% চলে যাবে। পেট স্বাভাবিক হলে সপ্তাহে 1 থেকে 2 দিনের বেশি না খাওয়াই ভালো।

ইসবগুলের ভুসির কার্যকারিতাঃ

অ্যাসিডিটির প্রতিকারে

বর্তমানে আমাদের প্রায় সবারই অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে, আর ইসবগুল হতে পারে এই অবস্থার ঘরোয়া প্রতিকার। ইসবগুল খেলে তা পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালে একটা প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে, যা অ্যাসিডিটির বার্ন থেকে পাকস্থলীকে রক্ষা করে। এছাড়াও ইসবগুল সঠিক হজমের জন্য এবং পাকস্থলীর বিভিন্ন এসিড নিঃসরণে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ২ চামচ ইসবগুল আধা গ্লাস ঠান্ডা দুধে মিশিয়ে পান করতে হবে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ

ইসবগুলের ভুসিতে রয়েছে জিলাটিন নামক একটি উপাদান। যা দেহে গ্লুকোজের শোষণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।যার ফলে রক্তে সহজে সুগারের পরিমাণ বাড়তে পারে না। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এ ভুসি খুবই উপকারী।

পেটের সমস্যা দূর করে

পাকস্থলী ঠান্ডা রাখতে ও হজমের সমস্যা দূর করতে ইসুবগুলের তুলনা নেই।ইসবগুলের ভুসির শরবত পেটব্যথার উপশম করে । এ ছাড়া আইবিএসের সমস্যা সমাধানে ভালো ফল দেয় ইসবগুলের ভুসি। যারা আমাশয়ে ভুগছেন, তাদের জন্যও ইসবগুল উপকারী।

ইউরিনাল সমস্যা সমাধানে ইসবগুলের ভুষি

যাদের ইউরিনে জ্বালাপোড়া আছে তারা সকালে-বিকালে ইসবগুলের শরবত খেলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমবে এবং ইউরিনের রং স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কারো যদি হাতে, পায়ে জ্বালাপোড়া ও মাথা ঘোরানো সমস্যা থাকে তাহলেআখের গুড়ের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি মিলিয়ে সকাল-বিকাল এক সপ্তাহ খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।

যৌনতা বৃদ্ধি করতে

প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস হালকা গরম দুধের সঙ্গে মধু ও ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে শরবত তৈরি করে খেলে যৌনতা বৃদ্ধি পায়।

ডাইরিয়া কমাতে

ডাইরিয়ার সময় ইসবগুলের ভুসি ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে অতিরিক্ত পানি শোষণ করে নেয় ও স্টুলকে ঘন করে ও বারবার টয়লেটে যাওয়া থেকে বিরত রাখে।

ওজন কমায়

ইসবগুলে ফাইবার থাকায় হজম প্রক্রিয়া অনেক ধীরগতিতে হয়। তাই ক্ষুধা লাগে অনেক কম। এটি খেলে ওজন কমানো সহজ হয়।

রক্তে কোলেস্টেরল কমায়

এ ভুসি খেলে আমাদের অন্ত্রে একধরনের স্তর তৈরি হয়। যা কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়। ফলে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তাই হৃদরোগীদের জন্য এটি দারুণ একটি খাবার ।

আমাশয়

ইসবগুল আমাশয়ের জীবাণু ধ্বংস করতে না পারলেও, তা বের করে দিতে পারে। তাই আমাশয়ের রোগীরা সকালে ও রাতে একগ্লাস ইসবগুলের শরবত খেলে উপকার পাবে। ওষুধ খেয়ে আমাশায় ঠিক করলে জীবাণুগুলো পেটের ভেতরে মরে গেলেও শরীর থেকে বের হয় না; যার কারণে আবারও আমাশায় রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।

পেট পরিষ্কারে ইসবগুলের ভুষি

পেট পরিস্কার করতে ইসবগুলের ভুষি সকল ওষুধের উপরে । অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অর্শ্বরোগ হয়ে যায়। আবার এই অর্শ্বরোগ মরণব্যাধি ক্যান্সারে পরিণত হয়। এসব সমস্যার সমাধানে প্রাচিন কাল থেকে ইসবগুলের ভুষি মহঔসধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে । ইসবগুলের ভুসি প্রাকৃতিক ভাবে আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। প্রতি রাতে ইসবগুলের ভুসি খেয়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করলে আমাশয় এর মত কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি
গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যেতেই পারে, তবে যদি অন্য কোন সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই খাবেন।

ইসবগুলের ভুসির কিছু অপকারিতা
১। যেকোন খাবারই বেশি পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যকর নয়। তাই অতিরিক্ত খেলে, উপকারী ইসবগুলেরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
২। কখনো কখনো ইসবগুলের ভুষি পাকস্থলীতে টানটান ভাব সৃষ্টি করতে পারে। তাই এমন ক্ষেত্রে ইসবগুল খাওয়া বন্ধ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৪।Appendicitis ও stomach blockage মত স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে ইসবগুল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
৫। ইসবগুল বেশিক্ষন ভিজিয়ে না রেখে সাথে পান করার চেষ্টা করুন। চিকিৎসকদের পরামর্শ হলো ইসবগুল যথেষ্ট পরিমাণ পানিতে ঢেলে যত দ্রুত সম্ভব পান করে নিন।
৬। ইসবগুলের ভুষি গেলা কষ্টকর তাই যাদের অন্ত্রে রোগ আছে, তাদের জন্য এটি সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
৭। সারা বছর ধরে খেলে পেটে সমস্যা হতে পারে এবং ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভবনা থাকে । তাই একটানা সাত বা দশ দিনের দিনের বেশি না খাওয়াই ভালো। এছাড়া কিছু ওষুধ সেবনেও ইসবগুলের ভুসি বাধা দেয়।
৮। ইসবগুলের ভুষি এবং দই এক সাথে খাবেন না। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য’র সমস্য হতে পারে।
সতর্কতা
উপরে উল্লেখিত রোগ গুলোর ঘরোয়া চিকিৎসা যদি খুব বেশি গুরুতর হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কিছু প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন:কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে উপকার পেতে কতক্ষণ ভিজিয়ে রেখে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া উচিত?

উত্তর:কোষ্ঠকাঠিন্যে ইসবগুলের ভুসি জাতীয় খাবারের উপকারিতা হচ্ছে এই জাতীয় খাবার গুলো উচ্চ আঁশযুক্ত হয়, তাই অন্ত্রে হজম হয় না ফলে মলত্যাগ বা ময়লা বের করতে ইসবগুলের ভুসি অত্যন্ত উপকারী।বেশি উপকার পেতে ভিজিয়ে না রেখে পানিতে গুলে সঙ্গে সঙ্গেই পান করে ফেলবেন।
প্রশ্ন:ইসবগুলের ভুসি রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে হয় কি? এবং এটির ব্যবহার কি শুধু কোষ্টকাঠিন্য নিরাময়?

উত্তর: হালকা ধরনের কোষ্ট’কাঠিন্যে সবজি, ফল ও পানি পান করলেই সেরে যায় তবে ইসবগুলের ভুসি খেলে মলের পরিমাণ বাড়ে আর মলের মধ্যে পানি ধারণ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
প্রশ্ন: ইসবগুলের ভুসি কীভাবে খাব? চিনি দিয়ে নাকি চিনি ছাড়া?
উত্তরঃএটি অনেক ভাবেই খাওয়া যায়, একটি হল- 1-2 চা চামচ ইসবগুল 1 গ্লাস পানি দিয়ে মিশিয়ে সাথে সাথে খেতে পারেন প্রতিদিন। পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাবেন যাতে শরীরের ভেতরে ঢুকে ইসবগুলের ভুসি ফোলে উঠে। প্রয়োজন না হলে চিনি মেশানোর দরকার নেই।
আবার এটি ডায়রিয়াজনিত রোগের জন্য প্রোবায়োটিক হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে। 2 চা চামচ ভুসি 15 মিলিলিটার টক-দইয়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ার পরে খাবেন। এরপর 1 গ্লাস পানি খেয়ে নেবেন।
আবার ইরিটেবল বাওয়েল Syndrome বা IBS এ যেখানে কোষ্টকাঠিন্য প্রধান্য পায় সেখানেও এই ইসবগুলের ভুসিখেতে পারেন।

Leave a Comment