কলার উপকারিতা এবং অপকারিতা

কলাকে সুপারফুড হিসেবে ধরা হয় ।কলাতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ এবং ভিটামিন বিদ্যমান থাকায় একে সুপারফুড বলা হয়। কাঁচা এবং পাকা উভয় প্রকার কলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যায়। কলার উপকারিতা কারণে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই কলা খেয়ে থাকে।

কলা Musaceae পরিবারের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ। এর দুটি গণ আছে, যথা: Ensete ও Musa। এ পরিবারে প্রায় ৫০টি প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত । Ensete গণের মাত্র ৬-৭টি প্রজাতি আছে, তবে এর মধ্যে মাত্র একটি প্রজাতি এ পর্যন্ত ইথিওপিয়ায় জন্মানো সম্ভব হয়েছে। Musa গণের প্রায় ৪০টি প্রজাতি রয়েছে। এর অধিকাংশ প্রজাতির উৎপত্তি দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায়। প্রায় সব আবাদকৃত কলাই এ প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত । এই গণকে আবার ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বাংলাদেশে কলার প্রায় ১৯টি জাত রয়েছে ।
কলার গুণাগুণ
কলা বিভিন্ন গুণাগুণে সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর ফল। এতে রয়েছে দৃঢ় টিস্যু গঠনকারী উপদান যথা আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ। কলা ক্যালোরির একটি ভাল উৎস। এতে কঠিন খাদ্য উপাদান এবং সেই সাথে পানি জাতীয় উপাদানের সমন্বয় যে কোন তাজা ফলের তুলনায় অনেক বেশি। একটি বড় মাপের কলা খেলে ১০০ ক্যালরির বেশি শক্তি পাওয়া যায়। কলাতে রয়েছে সহজে হজমযোগ্য শর্করা। কলার মধ্যে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উত্‍পাদনে সাহায্য করে। গবেষকরা জানান, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ নিশ্চিত করতে দেহে পটাশিয়ামের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। আর এই উপকারী পটাশিয়াম কলায় আছে প্রচুর পরিমাণে। গবেষকরা দেখেছেন, একটি কলায় প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে। আর মানবদেহে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়ামের যোগান দেয়া গেলেই স্ট্রোকের হাত থেকে বছরে বেঁচে যেতে পারে ১০ লক্ষ মানুষ।
কলার খাদ্যগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ কলায় যে খাদ্যগুণ আছে
পানি (জল) —————— ৭০.১%
আমিষ ———————- ১.২%
ফ্যাট (চর্বি) —————— ০.৩%
খনিজ লবণ ——————- ০.৮%
আঁশ ————————- ০.৪%
শর্করা ———————— ৭.২%
মোট ———————– ১০০.০%।
খনিজ লবণ এবং ভিটামিন
ক্যালসিয়াম———————– ৮৫মি.গ্রা.
ফসফরাস———————— ৫০মি.গ্রা.
আয়রন——————— ০.৬মি.গ্রা.
ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স—– ৮মি.গ্রা.
মোট ক্যালরি———————– ১১৬।

কলা খাওয়ার উপকারিতা

হার্ট ভালো রাখে

কলাতে থাকা পটাশিয়াম আমাদের হার্ট ভালো রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, কলা হলো পটাশিয়ামের খুব ভালো একটি উৎস। শরিরের পর্যাপ্ত পরিমান পটাশিয়াম না থাকার কারনে হার্টের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই প্রতিদিন একটি করে কলা খেলে হার্ট ভালো থাকে।

হজমের সমস্যার সমাধান করে

কলা হজমের সমস্যার সমাধান করে। কলার মধ্যে থাকা ফাইবার আমাদের অন্ত্রের সমস্যা দুর করে। পাকস্থলীর উন্নতির জন্য আমাদের নিয়মিত কলা খাওয়া দরকার। কলাতে থাকা ফাইবার পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। কলা রক্তের শর্করার পরিমন কমায়।কলা অন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলার কারনে অন্ত্রের সমস্যা দুর হয়। পাকস্থলীর এসিড কমাতেও কলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

মস্তিষ্ক ভালো রাখে

কলাতে থাকা ভিটামিন-বি৬ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। আমাদের শরিরের সমস্ত কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ কর আমাদের ব্রেইন। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন-বি৬ সমৃদ্ধ খাবার রাখা দরকার। যারা প্রতিদিন কলা খায় তাদের দেহে প্রয়োজনমতো ভিটামিন-বি৬ থাকে। যার ফলে তাদের মস্তিষ্ক ভালো কাজ করে। কলাতে থাকা পটাশিয়াম মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেন প্রবাহ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও কলাতে থাকা উপাদানগুলো মস্তিষ্ককে সচল রাখে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে

কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, কার্বোহাইড্রট। কলাতে থাকা এসব গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কলা খেলে আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার হয়। রক্ত ভালোভাবে চলাচলের জন্য কলাতে থাকা উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

প্রয়োজনিয় শক্তি বৃদ্ধি করে

কলাতে রয়েছে অ্যামিনো এসিড, শর্করা, এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ। কলার এই উপাদানগুলো আমাদের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।আমাদের দেহের প্রয়োজনিয় শক্তির জন্য আমাদের কলা খাওয়া উচিত।কলা দেহের রক্ত চলাচল ঠিক রেখে এবং শরিরের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে। মাত্র ২ টি কলা ৯০ মিনিট পরিশ্রম করার মত শক্তি যোগান দিতে পারে ।

কলা মাসিকের যন্ত্রণা কমায়

আমরা জানি যে, মাসিকের সময় মেয়েদের পেটে অনেক ব্যাথা করে। মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যাথাটা অনেক প্রখর হয়। এই রকম যন্ত্রণাদায়ক ব্যাথা কমাতে কলা আপনাকে সাহায্য করতে পারে। কলাতে থাকে ভিটামিন-বি৬ এবং পটাশিয়াম। আরএই উপদানগুলো জরায়ুর পেশিকে শক্তি প্রদান করে। তাই পিরিয়ডের সময় কলা খেলে ব্যথা কমে।

কলার ক্ষতিকর দিক

কলাতে অনেক বেশি পটাশিয়াম রয়েছে। তাই অতিরিক্ত কলা খেলে হার্টের সমস্যা হতে পারে। তাই আমাদের উচিৎ পরিমানমতো কলা খাওয়া।

কলা শর্করা সমৃদ্ধ একটি নরম খাবার। তাই কলা খাওয়ার পরে ব্রাশ করে না নিলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে।

গর্ভবতী মহিলাদের কলা খাওয়ানোর ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কলাতে অনেক বেশি অ্যামিনো এসিড থাকায় অতিরিক্ত কলা খেলে রক্তনালিতে সমস্যা হতে পারে।

এলার্জি জনিত সমস্যা থাকলে কলাগাছের মুকুল বা কান্ড খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

অ্যাসিডিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় শুকনো কিছু খাবারের সঙ্গে কলা খাওয়া উচিত । না হলে শরীরে উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেশিয়ামের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।

উপরে কলার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। কলার যেমন উপকারিতা আছে তেমনি কিছু অপকারিতাও আছে। তাই অতিরিক্ত কলা না খাওয়া উচিৎ । নিয়মিত প্রতিদিন ১-২ টা কলা খেলেই দেহের চাহিদা পূরণ হয়। উচ্চ পটাশিয়াম এবং ফাইবার সমৃদ্ধ এই খাবার নিয়ম মেনে খেতে হবে।

Leave a Comment