কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা

পৃথিবীতে যত ধরণের খাদ্য উপোযোগী ডিম রয়েছে তার মধ্যে গুণে এবং পুষ্টিতে ভরপুর হলো কোয়েল পাখির ডিম।বর্তমানে আমাদের দেশে কোয়েল পাখির ডিমের চাহিদা বেড়েছে। কোয়েল পাখির মাংস ও জনপ্রিয় খাবার।
কোয়েল পাখির ডিমের চাহিদা মেটাতেই বানিজ্যিক ভাবে কোয়েল পালন শুরু হয়েছে। অনেক বাসাবাড়িতেও এখন কোয়েল পাখি পালন করে।


কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই-

কোয়েলের ডিম খুবই ছোট। একটি কোয়েল পাখির ডিম বড়জোর ৯ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। কিন্তু একটি মুরগির ডিম ৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। তাই পরিমাণের দিক থেকে ৫টি কোয়েলের ডিম একটি মুরগির ডিমের সমপর্যায়ের হয়ে থাকে।
চিকিৎসকদের মতে কোয়েলের ডিম বিভিন্ন রোগ যেমন, পুরুষত্বহীনতা, কিডনী সমস্যা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, রক্তস্বল্পতা, ডায়াবেটিস প্রভৃতি রোগের জন্য উপকারি বলে বিবেচিত।

একটি কোয়েলের ডিমে কতটা পুষ্টি উপাদান থাকে

ক্যালরিঃ ১৪
ফ্যাটঃ ১ গ্রাম
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডঃ ৪ মিলিগ্রাম
ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডঃ ৮৪ মিলিগ্রাম
প্রোটিনঃ ১.২ গ্রাম
কোলেস্টেরলঃ ৭৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ও মিনারেল
ভিটামিন এঃ ১%
রিবোফ্লাভিনঃ ৪%
ভিটামিন বি১২ঃ ২%
প্যানথোনিক এসিডঃ ২%
আয়রনঃ ২%
সেলেনিয়ামঃ ৪%
ফসসরাসঃ ২%

কোয়েল পাখির ডিমের স্বাস্থ্য গুনাগুণ:

শক্তি বর্ধক

কোয়েলের ডিম শরীরের জন্য বেশ ভালো শক্তির একটি উৎস হতে পারে। কোয়েলের ডিম প্রোটিন ও আয়রনে সমৃদ্ধ, যা শরীরের এনার্জি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কোয়েলের ডিমের অ্যামিনো এসিড প্রোফাইল তৈরি করে দেখা যায় যে, এতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু অ্যামিনো এসিড বিদ্যমান। শরীরের ব্লাড শুগার নিয়ন্ত্রণে অ্যামিনো এসিড বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কিছু অ্যামিনো এসিড টিস্যুর ক্ষয়রোধ করে এবং নতুন টিস্যু গঠন করে। এছাড়াও কোয়েল পাখির ডিমে পাওয়া যায় লাইসিন নামক অ্যামিনো এসিড, যা শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরিতে এবং হরমোন, কোলাজেন ও এনজাইম উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।শরীরে আয়রনের অভাব হলে অ্যানেমিয়া দেখা দেয়,ফলে ঘন ঘন ক্লান্তি ও শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা দেখা যায়।কোয়েলের ডিম অ্যানেমিয়া রোধ করে।

মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা নিশ্চিতে

আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন বি১২, থাইমিন ও ভিটামিন বি২ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন বি১২ আমাদের স্মৃতিশক্তির ক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে। কোয়েলের ডিম ভিটামিন বি১২ এবং রিবোফ্লাভিন এর একটি ভালো উৎস। কিছু পরিমাণ থাইমিনও এতে বিদ্যমান থাকে ।

যেকোনো ডিমই আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখার মতো একটি খাবার। কোয়েলের ডিমও তাই। একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েটের উপাদান হতে পারে ডিম।

অ্যান্টিবডি তৈরী

কোয়েলের ডিমে এমন কিছু উপাদান আছে যা শরীরের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সহায়তা করে।

শিশুদের জন্য কোয়েল পাখির ডিম

বাচ্চাদের মানসিক,শারীরিক এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে কোয়েলের ডিম সহায়তা করে থাকে। দুর্বল বাচ্চা থেকে বৃদ্ধরা প্রতিদিন তিন চারটা করে কোয়েলের ডিম অনায়াসে খেতে পারেন।

কম কোলেস্টেরল

মুরগির ডিমের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায় কোয়েল ডিমে কোলেস্টেরল ১.৪% আর মুরগির ডিমে ৪% এবং প্রোটিনের পরিমান মুরগির ডিম থেকে কোয়েল ডিমে শতকরা ৭ ভাগ বেশী।

ভিটামিনের পরিমাণ

কোয়েলের ডিমে ভিটামিন বি-১ এর পরিমান মুরগীর ডিম থেকে ছয়গুণ বেশী, আয়রন ও ফসফরাস পাঁচ গুণ বেশী, ভিটামিন বি-২ পনেরো গুণ বেশী।

যকৃত, ত্বক, চুল ও চোখের সুরক্ষায়

রিবোফ্লাভিন, যা মূলত ভিটামিন বি২ নামে পরিচিত, দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়ার জন্য খুবই দরকারী। বি শ্রেণীর ভিটামিন আমাদের লিভার, ত্বক, চুল ও চোখের সুস্থতা নিশ্চিত করে। শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনেও রিবোফ্লাভিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।কোয়েলের ডিমে আকারের অনুপাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে রিবোফ্লাভিন, একের অধিক কোয়েলের ডিম নিয়মিত খেলে তা আমাদের লিভার, ত্বক, চুল, চোখের সুস্থতার জন্য যথেষ্ট উপকারী!

দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়

কোয়েলের ডিম উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘এ’-এর উৎস।এটি দৃষ্টিশক্তি প্রখর হয়। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট চোখের পেশি ভালো রাখতে সহায়তা করে। চোখে ছানি পড়তে দেয় না। চোখের বেশ কিছু সাধারণ সমস্যা দূর হয়।

অ্যালার্জি নিরাময় করে

ডিমের সাদা অংশে থাকে ওভোমিউকয়েড প্রোটিন। এটা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অ্যালার্জির কাজ করে। রক্ত জমাট বাঁধা, ইনফ্লামেশনসহ অ্যালার্জির বিভিন্ন রোগে কোয়েলের ডিম খুবই উপকারী। সুষ্ঠ বিপাকক্রিয়া ও শক্তি বৃদ্ধির জন্য এই ডিমের উপর ভরসা রাখতে পারেন।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

কোয়েলের ডিমে পটাসিয়ামের উপস্থিতি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।পটাসিয়াম রক্তবাহী নালি এবং শিরাগুলোতে আরাম দেয়। ফলে এগুলো সুষ্ঠুভাবে কাজ করে। মুরগির ডিমের তুলনায় অনেক বেশি পটাসিয়াম রয়েছে কোয়েলের ডিমে।

দেহ পরিষ্কার করে

দেহকে বিষমুক্তকরণ অতিব জরুরি। পরিবেশের অনেক ক্ষতিকর উপাদান দেহে প্রবেশ করে দেহের দূষণ ঘটায়। রক্তপ্রবাহ থেকে এসব উপাদান বের করতে দারুণ ভূমিকা রাখে কোয়েলের ডিম। মূত্রথলি এবং কিডনিতে পাথর হতেও বাধা দেয়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

কোয়েলের ডিমে প্রাপ্ত খণিজ উপাদানগুলোর একটি হলো সেলেনিয়াম। সেলেনিয়াম প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। সেলেনিয়ামে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহকোষকে ক্ষয় হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সেলেনিয়ামযুক্ত খাদ্য রাখাটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। সেক্ষেত্রে কোয়েলের ডিম অনেক উপকারী।

কোয়েলের ডিম বয়স ভেদে কতটি করে খেতে পারবেন তা জানা জরুরি। যারা ১ থেকে ৭ বছর বয়স তারা ২/৩ টা ডিম খেতে পারবেন,যারা ৮ থেকে ১৫ বছর বয়সী তারা নিয়মিত ৩টা ডিম খেতে পারবেন,যারা ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী তারা ৪/৫টা খেতে পারেন আর যারা প্রাপ্র বয়স্ক তাঁরা চাইলে ৪৯ দিনে ২৪৯ টি ডিম খেতে পারেন।

সাবধানতা

এই ডিমে সামান্য পরিমাণে ফ্যাট আছে। তাই অতিমাত্রায় খাওয়া ঠিক নয়। তা ছাড়া এমনিতেই অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।

যেকোনো ডিমই দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখার মতো একটি খাবার। কোয়েলের ডিমও তাই।স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অবিচ্ছেদ্য উপাদান ডিম। তবে ডিমে আছে বেশ ভালো পরিমাণে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল, যা অন্যান্য ফ্যাক্টরের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন হৃদরোগের সৃষ্টি করতে পারে। তাই যাদের ডায়বেটিস এবং কোলেস্টেরল রয়েছে তারা ডিম খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার।

উপরোক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে কোয়েল পাখির ডিমের উপাকারিতা বেশি। তাই আমরা নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খাবো এবং সুস্বাস্থ্য গড়ে তুলব।

Leave a Comment