নিম পাতার উপকারিতা

আমরা কমবেশি সকলেই নিম গাছের সাথে পরিচিত। নিম গাছ একটি চিরহরিৎ বৃক্ষ যেটি বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে পাওয়া যায় ।এই নিমগাছের অন্যতম নাম হল  ইন্ডিয়ান লিলাক বা ডগনিয়ারো। কথায় আছে নিমগাছের হাওয়া ও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো।

নিম গাছের ডালপালা, পাতার রস, সবকিছুই স্বাস্থ্যের জন্য অনেক অনেক উপকারী। আমরা নিম গাছের উপকারী গুণসমূহ অনেকেই ভালোভাবে জানিনা। আমাদের সকলের বাড়ির আঙ্গিনায় নিম গাছ অনেকেই লাগিয়ে থাকি।আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক সমস্যা সমাধান এই প্রকৃতির মধ্যেই লুকায়িত, যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল নিম গাছ।

এই নিমগাছের রয়েছে .১৩০ টি ঔষধি গুণ তার মধ্যে আজ আমরা জানবো নিমপাতার সকল ঔষধি গুণ যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অনেক উপকৃত করবে।

এই পাতার বৈশিষ্ট্য হলো এটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন. নিমপাতার রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টিভাইরাস বৈশিষ্ট্য যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনেক সহায়তা করে.,আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে নিমপাতার  উপাদান গুলো অনেক সাহায্য করে যা গবেষণায় প্রমাণিত। উপাদান গুলো হলো এস মিটানস, ই ফ্যাকালিস এবং এস অরিয়াস । আমরা আজকে নিম পাতায় সেই সকল উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারব।

১। ত্বকের যত্নে নিম পাতার উপকারিতা 

আমরা সকলেই কমবেশি ত্বক নিয়ে চিন্তিত থাকি। তার মধ্যে রয়েছে ত্বকের উজ্জ্বলতা, ত্বকের কোমলতা, বজায় রাখা এবং চুলের গুনাগুন রক্ষা করা। নিম পাতার নির্যাস ত্বকের এই সকল প্রকার সমস্যা সমাধানে অনেক সাহায্য করে থাকে।

ক। ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার

ত্বকের যত্নে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা সম্মুখীন হতে হয় ব্রণ নিয়ে। আমরা ব্রণ সমস্যা দূরীকরণে যতই না কার্যকরী তার চেয়েও আরো বেশি ব্রণ সমস্যা আরো বাড়িয়ে থাকি।কিন্তু আমাদের হাতের কাছেই প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যার মাধ্যমে নিমিষেই আমরা এই ব্রণের সমস্যা থেকে সমাধান পেতে পারি। নিমপাতার মধ্যে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান থাকায় নিমপাতা থেঁতো করে ব্রণের জায়গায় লাগালে অতি দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়। 

খ। চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা

আমাদের অনেকেই চুলের স্কাল্পে চুলকানি সমস্যা সম্মুখীন হয়ে থাকে নিম পাতার নির্যাস স্কাল্পিং নিয়মিত লাগালে  চুলকানি কমে, চুল শক্ত হয়, চুলের শুষ্কতা কমে যায় এবং নতুন চুল গজায়।

আমাদের সকলের মাথায় খুশকির মত অতি সাধারন সমস্যা সমাধানে নিমপাতার জুড়ি নেই অতি দ্রুত ফলাফল পেতে প্রথমে পরিমাণ মতো পানি ও নিম পাতা নিয়ে সেদ্ধ করুন। যতক্ষণ না পানিটা নীল হচ্ছে। এরপর তা ঠান্ডা করে গোসলের সময় চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধোয়ার পর এই পানি দিয়ে মাথা পরিষ্কার করুন।

গ। চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার

চুলকানি হতে রক্ষা পেতে নিমপাতা ভেজে গুঁড়ো করে সরিষার তেলের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে চুলকানিতে লাগালে অনেক ভালো উপকার পাওয়া যায়. তাছাড়া নিমপাতা কাঁচা হলুদের গুড়ার সাথে নিশিরে প্রলেপ আকারে আক্রান্ত স্থানে লাগালে 7 থেকে 10 দিনের মধ্যেই আরোগ্য লাভ করা যায় এটি খোস পাঁচড়া এবং পুরনো ক্ষত দূরীকরণে ব্যবহৃত হয়. অন্যদিকে নিমপাতা নিমপাতা ক্ষতস্থানে  রাগালো অতি দ্রুত আরোগ্য লাভ হয় 

২। দাঁত ও মাড়ির সংক্রমণ দূরীকরণে নিম পাতার ব্যবহার

নিমপাতার ব্যবহার আমাদের দাঁত ও মাড়ির অনেক সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে। যার কারণ  অতীতে নিমপাতা মাজন হিসেবে ব্যবহার করা হতো।  নিম পাতার রস দাঁতের জন্য অনেক ভালো। নিম পাতার রস মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এবং দাতে থাকা জীবাণু ধ্বংস করতে উপকারী কারণ এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান।

৩। চোখের উপকারিতায় নিমপাতা

 আমাদের চোখে অনেক সময় লালচে ভাব প্রদাহ চুলকানি ইত্যাদি থেকে রক্ষা পেতে নিম পাতার রস অনেক উপকারী। প্রথমে নিম পাতা পানিতে ভিজিয়ে গরম করে সেদ্ধ করে নিন এরপর ঠাণ্ডা করে উক্ত পানি দিয়ে চোখ ভিজিয়ে নিন।  এই নিম পাতার রস আপনার চোখের ক্লান্তি ভাব দূরীকরণেও সাহায্য করবে। 

৪। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে নিম পাতার ব্যবহার

যারা উচ্চ রক্তচাপ সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য নিম পাতা একটি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। নিম পাতার নির্যাস আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ সকল বিষাক্ত পদার্থকে পরিষ্কার করে এবং রক্ত বিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে। আপনি নিয়মিত নিম পাতার রস পান করলে আপনার রক্ত চলাচলের রাস্তা প্রশস্ত হয়। যার কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তা দূর হয়। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস মধুর সাথে গরম পানি মিশিয়ে সাথে নিম পাতার নির্যাস মিশিয়ে খেলে শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। এছাড়া এটি নিয়মিত খেলে শরীরের মধ্যে হরমোনের মাত্রার স্বাভাবিকতা বজায় থাকে।

৫। হজম শক্তি বৃদ্ধির জন্য নিম পাতার ব্যবহার

নিম পাতার মধ্যে অনেক সহায়ক উপাদান থাকার কারণে বদহজম জনিত সমস্যার সমাধানে এটি খুবই উপকারী যার অন্যতম উপাদান হলো  ইনফ্লেমেটরি। নিম পাতার রস খাদ্য হজমে সহায়তা করে । নিমপাতা আপনার শরীরে সকল বিষাক্ত পদার্থগুলো বের করবে যার কারণে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের ত্বকগুলো পরিষ্কার হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সকল সমস্যার সমাধান হয়।  বদহজমের সুফল পেতে প্রতিদিন সকালে তিন থেকে চারটি নিম পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন।  অনেকেই বলবে নিমপাতা খেতে অনেক তেতো। সে ক্ষেত্রে আপনি কিছু নিমপাতা ছোট করে কেটে রোদে শুকিয়ে বোতলে সংরক্ষণ করতে পারেন এবং তা প্রতিদিন পানির মাধ্যমে ১ থেকে ২ টি সেবন করতে পারেন এটি অনেক উপকারী। 

৬। কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিস কমানোর জন্য নিম পাতা

নিমপাতার রস আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে প্রতিদিন সকালে নিম পাতার নির্যাস গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। নিম পাতার নির্যাস এক চামচ প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে তিনমাস সেবন করলে ডায়াবেটিসের মাত্রা যেমন কমে ঠিক তেমনি ইনসুলিন নেওয়ার প্রবণতা ৩০-৭০% কমে যায়। 

তাহলে আপনারা সকলে নিমপাতার সকল উপাদান এবং তাদের অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলেন। শুধু নিমপাতা যে উপকারী তা নয় নিম গাছের অনেক ডালপালা, শেখর রয়েছে যা আরো অনেক গুরুতর রোগবালাই থেকে আমাদের রক্ষা করে। বিশেষ করে নিমের পাউডার যদি আপনারা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করেন তাহলে মাথার উকুন প্রতিহত, মাথার চুল ঝরে পরা,  একজিমা , আমাদের অতি সাধারণ একটি সমস্যা সাইনাস থেকেও মুক্তি পেতে পারেন । নিমপাতার অনেক ব্যবহার রয়েছে কিন্তু যারা চিন্তাভাবনা করছেন নিয়মিত নিম পাতার সেবন করবেন, তাদের উচিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। কারণ কোনকিছুই অতিরিক্ত সেবন করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নাও হতে পারে। সেই দিকে বিবেচনা করে উভয় দিক চিন্তা ভাবনা করে আগানোই বুদ্ধিমানের কাজ ।

Leave a Comment