আপেলের উপকারিতা

সভ্যতার শুরু থেকেই যে ফলটির সাথে মানুষের সম্পর্ক শুরু সেটি হলো আপেল। আপনি আদম আর ইভের গল্প তো নিশ্চয় জানেন। আপেলে কামড় বসিয়ে মনুষ্যজাতির সূচনা হল।আপেল পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয়, পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু ফলের মধ্যে একটি।প্রতিদিন একটি আপেল খেলে আপনি ডাক্তার থেকে দূরে থাকতে পারবেন।

আপেলের ব্যাপারে কিছু মৌলিক তথ্য

বোটানিক্যাল নাম : ম্যালিয়াস ডমেস্টিকা (Malus domestica )
পরিবার : রোসাসি (Rosaceae)
প্রচলিত নাম : আপেল
সংস্কৃত নাম : ফল প্রভেদা
বেশি চাষকৃত প্রজাতি : জেনাস ম্যলুস (genus Malus)
আপেলের উৎপত্তিস্থল : মধ্য এশিয়া
পূর্বতন বুনো প্রজাতি : ম্যলুস সিভেরসিকে (Malus sieversii)
আপেলের জাত : 7500 টিরও বেশি

আপেলের পুষ্টিগুণ সমূহ

খাদ্যশক্তি—– ৫২ কিলোক্যালরি
শর্করা—– ১৩.৮১ গ্রাম
চিনি—– ১০.৩৯ গ্রাম
খাদ্যআঁশ—– ২.৪ গ্রাম
চর্বি—– ০.১৭ গ্রাম
আমিষ—– ০.২৬ গ্রাম
জলীয় অংশ—– ৮৫.৫৬ গ্রাম
ভিটামিন এ—– ৩ আইইউবিটা
ক্যারোটিন—– ২৭ আইইউ
লুটেইন—– ২৯ আইইউ
থায়ামিন—– ০.০১৭ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লেভিন—– ০.০২৬ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন—– ০.০৯১ মিলিগ্রাম
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড—– ০.০৬১ মিলিগ্রাম
ফোলেট—– ৩ আইইউ
ভিটামিন সি—– ৪.৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ই—– ০.১৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে—– ২.২ আইইউ
ক্যালসিয়াম—– ৬ মিলিগ্রাম
আয়রন—– ০.১২ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম—– ৫ মিলিগ্রাম
ম্যাংগানিজ—– ০.০৩৫ মিলিগ্রাম
ফসফরাস—– ১১ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম—– ১০৭ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম—– ১ মিলিগ্রাম
জিংক—– ০.০৪ মিলিগ্রাম
ফ্লোরাইড—– ৩.৩ আইইউ

আপেল খাওয়ার উপকারিতা

হার্ট ভালো রাখে

আপেল খেলে হার্টের অসুখের সম্ভাবনা কমে। আপেলের মধ্যে যে ফাইবার থাকে তা রক্তে কোলোস্টরলের মাত্রা কমায়। ব্লাড প্রেশার কমে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পরিমিত আপেল খেলে ২০ শতাংশ স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে।

আপেল ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়

আপেলে পেকটিন নামের একটি উপাদান থাকে যা ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক রেখে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে। তাছাড়া আপেলের মধ্যে যে ফাইবার থাকে, তা রক্তে শর্করার পরিমাণ সঠিক রাখতে সাহায্য করে।

অগ্নাশয়ের ক্যান্সার কমাতে :
আপেলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফ্লাভোনল।আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ -এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে,আপেল খেলে অগ্নাশয়ের ক্যান্সারের সম্ভাবনা প্রায় ২৩% হারে কমে।
কোলন ক্যান্সার রোধ করতে :
আপেলের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফাইবার। যা সবুজ আপেলে প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। এই ফাইবার আমাদের পেটের যেকোনো সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে ও পরিপাক প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আপেলের মধ্যে এমন কিছু উপাদানের সন্ধান পেয়েছেন যা টিটারপেনোয়েডস নামে পরিচিত। এই উপাদানটি লিভার , স্তন এবং কোলনের মধ্যে ক্যান্সারের কোষ বেড়ে উঠতে বাধা দেয়।
ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ইন দ্য ইউ এস – এর গবেষণা থেকে জানা যায় আপেলের মধ্যে যে পরিমান ফাইবার থাকে তা মলাশয়ের ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে।
সবুজ আপেলে আছে ফ্লেভোনয়েড ও পলিফেনল যা এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এই উপাদানগুলো আমাদের দেহের ডিএনএ -এর ক্ষতি রোধ করে এবং ক্যান্সার রোধ করে।
আপেল খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে :

আপেল চোখের দৃষ্টিশক্তিকে অনেকগুন বাড়িয়ে দেয়।আপেলে থাকা ভিটামিন-A এবং ভিটামিন-C চোখের দৃষ্টিশক্তি সজীব রাখে।নিয়মিত আপেল খেলে চোখে ছানি পড়াও রোধ করা সম্ভব।
ভালো ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়:
আপেলের মধ্যে পেকটিন নামের একটি ফাইবার আছে। যা প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ দেহে ভাল ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়। এছাড়াও কিছু এমন কম্পাউন্ড তৈরি করে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।সে কারণেই আপেল ওবেসিটি, টাইপ টু ডায়াবেটিস এবং হার্টের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।
ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে আপেল:

আপেলের জৈব অ্যাসিড উপাদান আমাদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যদি আপনার বারবার ক্ষুধা লাগার সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি আপেল খেয়ে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

আপেলের মধ্যে কুয়েরসেটিন নামক এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং আমাদের শরীর ভাল রাখতে সাহায্য করে।

ত্বক ভালো রাখতে আপেল:

আপেল ভিটামিন সি এবং পলিফেলনে সমৃদ্ধ,যার বৈশিষ্ট্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গবেষণায় দেখা গেছে যে এই উপাদানগুলো ত্বকের বাধ্যক্য প্রতিরোধে সহায়তা করে।তাই স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল ত্বক পেতে নিয়মিত আপেল খাওয়া যেতে পারে।

দাঁতের জন্য আপেল:

আপেল খেলে দাঁতের দারুণ উপকার হয়। আপেলের রস আপনার দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। ফলে ব্যাকটেরিয়া দাঁতের কোনও ক্ষতি করতে পারেনা। ফলে দাঁত ভালো থাকে এবং দাঁত শক্ত ও মজবুত হয়।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে:
আপেলে কোনো ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই এবং এটি আমাদের পেটের সুস্থতায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই নিশ্চিন্তে আপেল খেতে পারেন। কেননা এর কোনো ক্ষতিকারক দিক নেই।
ডায়ারিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে আপেল:
প্রয়োজন অনুযায়ী বর্জ্য থেকে অতিরিক্ত জল টেনে ধরে রাখতে পারে আপেল। তাই একদিকে যেমন ডায়েরিয়ার প্রকোপ কমায় সাথে হজমশক্তিও বৃদ্ধি করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর হয়।
আপেলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of Apple):
যদিও আপেলের স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক বেশি তবুও অতিরিক্ত আপেল খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের আপেল না খাওয়াই ভালো। আপেলের গায়ে লেগে থাকা মোমের কারণে এলার্জির সমস্যা আরো বেড়েযেতে পারে।
আপেলের বীজে সমস্যা হতে পারে। আপেলের বীজ থেকে বিষ তৈরি হয়। ফলে বেশি পরিমাণ আপেলের বীজ খেলে তা ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
আপেল অ্যাসিডিক ফুড। আপেল খেলে অনেকের অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়।
আপেল নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্নোত্তর

দিনের কোন সময়ে আপেল খেলে উপকার হবে?
আপেল খাওয়ার সঠিক সময় হলো সকাল। সকালবেলা টিফিন করার ৩০ মিনিট পরে আপেল খাওয়া উচিত।

আপেলের কি খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া উচিত?

আপেল খোসা সমেত খাবেন, নাকি ছাড়িয়ে খাবেন, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। তবে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে আপেলের মধ্যে যে সমস্ত ভাল গুণ রয়েছে, তার বেশিরভাগটাই রয়েছে খোসায়। ফলে খোসা না ছাড়িয়ে ভাল করে ধুয়ে খেতে পারেন।

ওবিসিটিতে কি আপেল খাওয়া উচিত?

হ্যাঁ ,যাদের ওজন বেশি তারও আপেল খেতে পারেন। কারণ একটি আপেলে রয়েছে 5 ক্যালোরি কিন্তু সে আপেলটি হজম হতে প্রয়োজন 10 ক্যালরি। সুতরাং প্রতিদিন একটি আপেল খেলে আপনার ক্যালোরি ক্ষয় হবে এবং আপনার শরীরের ওজন কমবে।

Leave a Comment