তেতুলের উপকারিতা


তেতুল বসন্ত-কালের ফল হলেও এটি সারা বছরই পাওয়া যায়। তেতুল দেখলে মুখে জল আসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন।তেতুলের উপকারিতার কারণে নারী-পুরুষ উভয়েই তেতুল খুব পছন্দ করে। তেঁতুল একটি ভেষজ ফল। কাঁচা এবং পাকা দুই অবস্থাতেই তেঁতুল খাওয়া যায়।

তেঁতুলের বৈজ্ঞানিক নাম-Tamarindus indica, ইংরেজি নাম-Melanesian papeda। এটি Fabaceae পরিবারের Tamarindus গণের অন্তর্ভুক্ত টক জাতীয় ফলের গাছ। এটি একপ্রকার টক ফল বিশেষ। তেঁতুল এর বোটানিকাল নাম, তামারিন্দুস ইন্ডিকা (Tamarindus indica)।

তেতুলের পুষ্টিগুণ

কেউ যদি আপনাকে প্রশ্ন করে তেতুলে কি কি পুষ্টিগুণ আছে? তাহলে তাকে উল্টো প্রশ্ন করুন তেতুলে কি কি পুষ্টিগুণ নেই ? তেতুল একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন ফল ।এতে বিভিন্ন ধরনের খনিজ ও ভিটামিন এর উপস্থিতি রয়েছে। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে টারটারিক এসিড, চিনি এবং আরো অনেক স্বাস্থ্য উপাদান।

তেতুলে কোন উপাদানটি কি কি পরিমাণে রয়েছে তা একটু দেখি


তেতুলের শক্তিবর্ধক উপাদানগুলো হলো


শর্করা= 62.5 গ্রাম
চিনি= 57.4 গ্রাম
ফাইবার= 5.1 গ্রাম
ফ্যাটের উপাদান
স্যাচুরেটেড ফ্যাট= 0.272 গ্রাম
মনোস্যাচুরেটেড= 0.181 গ্রাম
পলিওনস্যাচুরেটেড= 0.059 গ্রাম
প্রোটিনের উপাদান
ট্রাই প্রোফান= 0.018 গ্রাম
লাইসিন= 0.139 গ্রাম
মিথায়োনিন= 0.05 9 গ্রাম

ভিটামিনের উপাদান


ভিটামিন এ= 30 আই ইউ
ভিটামিন বি১= 0.428 মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি২= 0.0152মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৩= 1. 938 মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৫= 0 .143 মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৬= 0.066 মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৯= 14 মাইক্রো গ্রাম
ভিটামিন সি =3.5 মিলিগ্রাম
ভিটামিন ই =0.1 মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে= 2.8 মাইক্রো গ্রাম
খনিজ পদার্থের উপাদান
ক্যালসিয়াম= 74 মিলিগ্রাম
কপার= 0.86 মিলিগ্রাম
আয়রন= 2.8 মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম= 92 মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম= 0.628 মিলিগ্রাম
ফসফরাস= 113 মিলিগ্রাম
সোডিয়াম= 28 মিলিগ্রাম
জিংক= 0.1 মিলিগ্রাম
এছাড়াও এতে পানির পরিমাণ হল= 31.40 গ্রাম


তেতুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা


পেট ব্যথা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে তেতুল অনেক উপকারী ।তেঁতুলের মধ্যে টার্টারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড এবং পটাশিয়াম আছে যা কোষ্ঠন্যকাঠিন্য দূর করে।পেট ব্যথা দূর করতে তেঁতুল গাছের ছাল এবং শিকড় ব্যবহার করা হয়।
তেঁতুল রক্ত পরিষ্কার রাখে এবং পরিপাক ক্ষমতা বাড়ায় ।
তেঁতুল রক্তে কোলেস্টেরল কমায়।দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
ভিটামিন সি এর সবচেয়ে বড় উৎস তেতুল।যাদের শরীরে ভিটামিন ‘সি’ এর অভাব রয়েছে তারা তেতুল খেলে সে অভাব অনায়াসে পূরণ করতে পারেন।
যাদের রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি তারা খাদ্যতালিকায় তেতুল রাখতে পারেন।এরমধ্যে থাকা এনজাইম রক্তে চিনির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের তেঁতুল খাওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। আসলে তেঁতুল বমির ভাব কাটাতে সাহায্য করে বলেই গর্ভবতী মায়েরা তেঁতুল খেতে খুবই পছন্দ করেন।
তেতুল যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।
জন্ডিস রোগে তেতুল খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
শরীরের বিভিন্ন বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ তেতুল বের করে দেয়।
শরীরে মেদ কমাতেও তেতুল বেশ কার্যকরী ।
তেতুল পাতার ভেষজ চা ম্যালেরিয়া জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
কিছু কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে তেতুলে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে ।
তেঁতুলকে হার্টের টনিক বলা হয়।
পুরোনো তেঁতুলের কার্যকারিতা বেশি। পেট ফাঁপা, বদহজম হলে পুরোনো তেঁতুল এক কাপ জলে ভিজিয়ে সামান্য নুন, চিনি বা গুড় দিয়ে খেলে অসুবিধা দূর হয়।
তেঁতুলে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার আছে ।আবার একই সঙ্গে এটা সম্পূর্ণ ফ্যাট ফ্রি। গবেষণায় দেখা গেছে যে রোজ তেঁতুল খেলে ওজন কমে।
ওজন কমাতে flavonoids and polyphenols এর উপস্থিতি কাজ করে। এছাড়াও এর উপস্থিত hydroxycitric acid খিদে কমায়।
তেঁতুলের কচিপাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে।
ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ১৭ গুণ বেশি ।
আর আয়রনের পরিমাণ নারকেল ছাড়া সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ২০ গুণ বেশি।
তেতুলে থাকা ভিটামিন ‘সি’ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তাই সর্দি-কাশির মত সমস্যাতে তেতুল খেলে উপকার পাওয়া যায় ।
তেতুল ত্বক উজ্জ্বল করে ।
পেপটিক আলসার রোদে তেতুলের উপকারিতা অনস্বীকার্য।
লিভার সুরক্ষিত রাখতে তেঁতুল খাওয়া যেতে পারে।

তেতুলের অপকারিতা

নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ গ্রহণের সময় তেতুল খেলে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়
=>অ্যাসপিরিন।
=>ইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সিন এর মত নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টিইনফ্লামেটরি
ড্রাগ (NSAIDs)।
=>রক্ত পাতলা করার ঔষধ (হেপারিন, ওয়ারফেরিন ইত্যাদি )।
=>অ্যান্টি-প্লাটিলেট ড্রাগ (ক্লপিডোগ্রে।

যদি আপনি এই ঔষধগুলো গ্রহণের সময় তেতুল খান তাহলে শরীরে এদের শোষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।এরা শরীরে অনেক বেশি কাজ করা শুরু করে এবং ক্রমান্বয়ে অধিক রক্তপাত শুরু হয়।
অতিরিক্ত পরিমাণে তেতুল খেলে লো প্রেসার হতে পারে
তেঁতুলের মধ্যে টারটারিক এসিড থাকে।এই এসিড আপনার দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে।
তেতুল পাকস্থলীতে এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে ।
কিছু গবেষকদের মতে, তেতুল পিত্তথলিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে ।

আলোচনা শেষে সর্বোপরি বলতে পারি যে অল্প কিছু ক্ষতিকর দিক থাকলেও তেতুলের ভালো দিক এর পরিমাণ বেশি। তেতুল একটি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল। তাই আপনি কুসংস্কার ভুলে নির্দিষ্ট পরিমাণে তেঁতুল খেতে পারেন।

Leave a Comment