মাশরুমের উপকারিতা

অর্গানিক খাবার মানেই বিশুদ্ধ খাবার। আপনি নিশচয়ই চাইবেন এমন কিছু খেতে যা আপনার শরীরের জন্য সহায়ক। পৃথিবীজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিকর খাদ্য। এদেরই একটি হচ্ছে মাশরুম।

মাশরুম বাংলাদেশে এখন একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। এটি কেবল খেতেই সুস্বাদু নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। মাশরুম সালাদ হিসেবে, ভেজে, সুপ করে বা রান্না করে খাওয়া যায়।প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাশরুম রাখা উচিত।প্রায় 7 হাজার প্রজাতির মাশরুম রয়েছে। তার মধ্যে 100 প্রজাতির মত মানুষ ব্যবহারের উপযুক্ত।

মাশরুম ক্লোরোফিল (Chlorophyll) বিহীন ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ এবং নতুন ধরণের সবজি যা সম্পূর্ণ হালাল, সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও উচ্চ খাদ্যশক্তি এবং ভেষজগুণে ভরপুর। এর মধ্যে ২৫-৩০% প্রোটিন আছে । এতে উপকারী শর্করা, চর্বি আছে।

যে কারণে মাশরুম বিভিন্ন জটিল রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। মাশরুমের পুষ্টিগুণের পাশাপাশি যে সব ঔষধিগুণ পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক!

মাশরুমের খাদ্যগুণ (প্রতি ১০০ গ্রামে)

মাশরুমের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

মাশরুম মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রাকৃতিকভাবে মাশরুমেই সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ও মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান। মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা সৃষ্টি করাই ভিটামিন, মিনারেলের ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রধান কাজ।

গর্ভবতী মা ও শিশুদের রোগ প্রতিরোধে

মাশরুমে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেলের এমন সমন্বয় আছে যা শরীরের ইমিউন সিষ্টেমকে উন্নত করে। নিয়োসিন ও অ্যাসকরবিক এসিড বা ভিটামিন সি’র প্রাচুর্য থাকায় মাশরুম স্কার্ভি ,পেলেগ্রা প্রভৃতি শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধে উপকারী।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
মাশরুমে কোলেস্টরেল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভাষ্টটিন, এনটাডেনিন, কিটিন এবং ভিটামিন বি, সি ও ডি থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়। এতে উচ্চমাত্রার আঁশ,প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম এবং সোডিয়ামের পরিমাণ খুবই কম থাকে ফলে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহ হৃদপিণ্ডের অন্যান্য কাজেও সহায়তা করে থাকে।
অ্যানিমিয়া দূর করে
মাশরুমে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে। অ্যানিমিয়ার রোগীদের রক্তে আয়রনের পরিমাণ খুব কম হয়ে যায়। এর ফলে মানসিক অবসাদ, মাথার যন্ত্রণা এবং হজমের সমস্যা দেখা দেয়। মাশরুম খেলে অ্যানিমিয়ার সমস্যা দূর করে।
দাঁত ও হাড় গঠনে
মাশরুমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি আছে। শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে এই উপাদানগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হজমে সাহায্য করে
মাশরুমে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকে। এই ফাইবার ও এনজাইম হজমে সহায়তা করে । এটি অন্ত্রে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার কাজ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং কোলন এর পুষ্টি উপাদান শোষণকেও বাড়তে সাহায্য করে।ইমিউন সিস্টেম বাড়ায়
মাশরুমের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাবে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়ায়।
মাশরুম আপনার বয়সের সাথে সাথে আপনার মস্তিষ্ককে রক্ষা করতে পারে।
গবেষকরা বলেছেন যে এই দুটি পূর্বোক্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস (এরগোথিয়াইনিন এবং গ্লুটাথাইন) পার্কিনসন এবং আলঝাইমারগুলি রোধ করতেও সহায়তা করতে পারে। ভবিষ্যতে আপনার স্নায়বিক অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে প্রতিদিন মাশরুম খাওয়ার পরামর্শ দেয় তারা।
ক্যান্সার প্রতিরোধ
বিশেষজ্ঞদের মতে মাশরুমে রয়েছে পলিকেন ও সেলেনিয়াম নামক অ্যান্টিওক্সিডেন্ট।মাশরুমের বেটা-ডি (Beta-D), ল্যামপট্রোল (Lampetrol), টারপিনয়েড (Turpinoid) ও বেনজো পাইরিন (Benzo Pyrene) আছে যা ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধ করে। আরও রয়েছে মানব দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সালফার এই উপাদানগুলো আপনাকে স্ক্যান্সার ও স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। সূর্যের আলোতে যে সব মাশরুম জন্মায় সে সব মাশরুমে প্রচুর ভিটামিন ডি থাকে যা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ করে। নিয়মিত মাশরুম খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার ও প্রোটেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
ত্বক সুস্থ রাখা
মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে নিয়াসিন ও রিবোফ্লাবিন থাকায় তা ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এর মধ্যে প্রায় ৮০-৯০ ভাগ পানি থাকে বলে ত্বককে নরম ও কোমল রাখতে বিশেষ ভুমিকা রাখে।

ভিটামিন ডি থাকে
সব্জিতে ভিটামিন ডি পাওয়া খুবই দুষ্কর। কিন্তু মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি বিদ্যমান রয়েছে, যা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের শোষণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

চুল পড়া ও পাকা প্রতিরোধে

মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে সালফার সরবরাহকারী এমাইনো এসিড থাকায় এটা নিয়মিত খেলে চুল পড়া ও পাকা প্রতিরোধ করে।
হেপাটাইটিস-বি ও জন্ডিস প্রতিরোধক
মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড লৌহ এবং লিংকজাই-৮ নামক এমাইনো এসিড থাকায় হেপাটাইটিস-বি ও জন্ডিসের প্রতিরোধক।
মাশরুম খাওয়ার পদ্ধতি
মাশরুম যে কেবল খেতেই সুস্বাদু তাই নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অল্প পরিমাণে হলেও মাশরুম রাখা উচিত। তবে আবর্জনায় উৎপন্ন মাশরুম না খেয়ে শুধু চাষ করা মাশরুম খেতে হবে। এটি ভেজে, সুপ করে বা রান্না করে কিংবা সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়। মাশরুম ১৫ থেকে ২০ মিনিট ফুটানো গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে উক্ত পানি ফেলে দিতে হয়। মাশরুম ফ্রাই করে বা সবজির মতো রান্না করেও খাওয়া যায়। এছাড়া তরকারি বা মাছ-মাংশের মধ্যে দিয়েও রান্না করা যায়।
তবে শুধু চাষ করে উৎপন্ন মাশরুম খেতে হবে।
বুনো জায়গায় জন্মানো মাশরুম খাওয়া উচিত নয়।

সম্পূর্ণ আলোচনা শেষে বলতে পারি যে,অনেক আগে থেকে ব্যবহার করে আসা মাশরুমের গুনাবলী বলে শেষ করার মতো নয়। তাই আসুন বেশী বেশী করে মাশরুম খাই এবং আমাদের শরীরকে করে তুলি রোগ প্রতিরোধ্য।

Leave a Comment