আনারসের ৬ টি উপকারিতা

অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি ফল হলো আনারস। আনারস আমাদের বাংলাদেশের বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে প্রচুর চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু মিষ্টি আনারসের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে মৌলভীবাজার জেলায়।

এই আনারস ফল খেতে যেমন মিষ্টি, সুস্বাদু ঠিক তেমনি এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। আনারসে থাকা ভিটামিন সি এবং এসকরবিক এসিড আমাদের দেহে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী। তাছাড়া আনারস জ্বর ঠান্ডা এবং হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে।

আনারস আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি ও পেশীর ব্যথা এবং রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। অথেরোস্ক্লেরোসিস নামক জটিল রোগ এবং বিভিন্ন ক্যান্সার থেকেও আমাদের আনারস সুরক্ষা দেয় ।

আসুন জেনে নিই আমরা আনারস থেকে কি কি উপকার পেতে পারি ।

১। আনারস পুষ্টির অভাব দূর করে

আনারস হল এমন একটি ফল যেটি খেতে অনেক সুস্বাদু এবং অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর। এই আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ,ক্যালসিয়াম, রিভোফ্লাবিন ভিটামিন বি ৬, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, এন্টিঅক্সিডেন্ট ,বিটা-ক্যারোটিন তাছাড়া রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা আমাদের দেহের পুষ্টি অভাব দূর করে। আনারস আমাদের দেহের তৈলাক্ত ত্বক, ব্রণ, ত্বকের কুঁচকে যাওয়া এবং মৃতকোষ দূর করতে সাহায্য করে ।

২। চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় আনারসের উপকারিতা

ম্যাকুলার ডিগ্রেডেশন এমন একটি জটিল রোগ যার কারণে আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে যায়।  যার দরুন একজন ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে সে অন্ধত্ব বরণ করে।  আনারস এর একটি উপাদান হলো বিটা ক্যারোটিন। এই বিটাক্যারোটিন আমাদের ম্যাকুলার ডিগ্রেডেশন নামক জটিল রোগ থেকে পরিত্রান পেতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাই এই মৌসুমে প্রতিদিন নিয়মিত আনারস খেলে আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি প্রখর হয় এবং জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। 

৩। আনারস হজমশক্তি বাড়ায় এবং ওজন কমায়  

ব্রোমেলিন হলো এমন একটি এনজাইম যা আমাদের শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।  আনারসের প্রচুর পরিমাণে ব্রোমেলিন নামক এনজাইম পাওয়া যায়। তাই আমাদের শরীরে বদহজম বা হজমজনিত যেকোনো সমস্যা মুক্তি পেতে আমাদের সকলের উচিত প্রতিদিন আনারস খাওয়া। আনারস অনেক যেমন পুষ্টিগুণসম্পন্ন ঠিক তেমনি এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার। তাই আনারসে ফ্যাটের পরিমাণ অনেক কম। নিয়মিত আনারস খেলে শরীরের বাড়তি মেদ ও ওজন কমে। 

৪। আনারস ভাইরাসজনিত রোগ থেকে বাঁচায়

ভাইরাস জনিত জ্বর, ঠান্ডা কাশি সারাতে আনারসে থাকা ভিটামিন সি কার্যকরী ভূমিকা রাখে এছাড়া আনারস জ্বর এবং জন্ডিসের প্রকোপ কমাতে অনেক উপকারী। ভাইরাসজনিত ব্রংকাইটিস, গলাব্যথা, সাইনোসাইটিস, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি  প্রতিরোধে আনারস গুরুত্বপূর্ণ। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি যা আমাদের দেহে শক্তি যোগায় এবং দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলোকেও ভালো রাখে। 

৫। আনারস ক্যানসার এবং হৃদরোগের উপকার করে

আমাদের মানব দেহের একটি অন্যতম শত্রূ হলো ফ্রিরেডিকেল। ফ্রিরেডিকেল আমাদের মানব দেহের কোষের উপর খারাপ বিক্রিয়া করে এবং ক্যান্সারসহ টিউমারের মতো জটিল রোগ দেখা দেয়। আনারসে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা আনারসের রসে দ্রবণীয় অবস্থায় থাকে। তাছাড়া রয়েছে ভিটামিন সি। এসব উপাদান  আমাদের দেহকে ফ্রিরেডিকেল থেকে সুরক্ষা দান করে। আনারস আমাদের দেহের রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং রক্ত জমাটে বাঁধা প্রদান করে। ফলে আমাদের হৃদরোগের মতো জটিল রোগ হবার আশংকা অনেকাংশে কমে যায়।  

৬। আনারস দাত, মাড়ি ও হাড়ের সুস্থতা নিশ্চিত করে

পেরিডন্টাল ডিজিস নামক জটিল রোগে আমাদের মাড়ির টিস্যু এবং চোয়ালের হাড়ের ক্ষয় সাধন হয়। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা আমাদের ভুললে চলবেনা। তাই আনারস আমাদের দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে এবং গিঙ্গিভাইটিস,পেরিডন্টাল ডিজিস নামক রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখে। প্রতিদিন আনারস খেলে দাঁত ঠিক থাকে এবং দাঁতে জীবাণুর আক্রমণ কম হয়। আমাদের মানবদেহে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম এর গুরুত্ব কতটুকু তা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। ক্যলসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ আমাদেরকে হাড় কে  করে তুলে মজবুত। যদি আমরা প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এই মৌসুমী ফল আনারস পরিমিত পরিমাণে রাখি তাহলে হাড়ের সকল ধরনের সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে পারি। 

আনারস এর অনেক উপকারিতা রয়েছে যা বলে শেষ করা সম্ভব নয়। আনারস একাধারে আমাদের মস্তিষ্কের স্নায়ু সমস্যা উপশমে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আমরা আগেই জেনেছি আনারস ম্যাঙ্গানিজের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। যদি আপনি সকালে এক কাপ আনারসের জুস পান করতে পারি তাহলে আনারস আমাদের শরীরের ম্যাঙ্গানিজ এর ঘাটতি ৭৩ ভাগ পূরণ করতে সক্ষম। তাছাড়া যদি খালি পেটে আনারস খাওয়া যায় তাহলে কৃমি থেকে পরিত্রান পেতে পারি। কারণ আনারস একটি কৃমিনাশক। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যাদের এসিডিটি সমস্যা রয়েছে তাদের আনারস ক্ষতি করতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও আনারস খুবই উপকারী। আনারস ক্ষুধাবর্ধক হিসাবে কাজ করে। তাই কোনো অসুস্থতার পরে মুখে রুচি আনতে আনারস খুবই ফলদায়ক।

Leave a Comment