জেনে নিন পুদিনা পাতার উপকারিতা

পুদিনা বর্তমানে আমাদের আশেপাশের বাজারে সব ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়। এটি একটি খুবই জনপ্রিয় সুগন্ধি এবং মসলাজাতীয় বিরুৎ প্রকৃতির গাছ। পুদিনা যে শুধু রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয় তা নয়, রূপচর্চার ক্ষেত্রেও পুদিনা অনেক কার্যকরী। পুদিনাতে রয়েছে অনেক ঔষধি, ভেষজ গুণ। যার কারণে ভারতের ‘আরব্রো ফার্মাসিউটিকাল’য়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৌরভ অরোরা বলেন, “পুদিনা পাতায় পাওয়া যায় ‘পলিফেনল’ যা একে ঔষধি গুণ দেয়। হাঁপানি, পেটের গোলমাল সারাতে তাই পুদিনা পাতা বিশেষ উপকারী।”পুদিনার মধ্যে থাকা ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম ইত্যাদি আমাদের মানবদেহে রক্তের হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা পূরণ করে। তাছাড়া এটি আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।

আসুন জেনে নেওয়া যাক সঠিকভাবে পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম এবং

পুদিনা পাতা ও জুসের উপকারিতাঃ

১। রুপচর্চায় পুদিনা পাতার উপকারিতা

পুদিনা একটি ওষুধিগুণসম্পন্ন এবং মসলা জাতীয় উদ্ভিদ হওয়া সত্ত্বেও এটাই অনেক সৌন্দর্যবর্ধক গুনাগুন বিদ্যমান।  পুদিনাপাতা একাধারে রোদে পোড়া ব্রাউন ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং ত্বকের সংক্রমণ রোধে অনেক উপকারী তাছাড়া চুলের যত্নেও পুদিনা পাতার রসের উপকারিতা জুড়ি মেলা ভার ।

ক। চুলের যত্নে পুদিনা পাতার রস

  আমাদের সকলের ব্যক্তিত্ব চুলের সৌন্দর্যের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। তাই এই চুল হওয়া চাই পুষ্টিগুণসম্পন্ন এবং বাহ্যিক পরজীবি আক্রান্ত থেকে মুক্ত।  চুলের একটি খুবই সাধারন সমস্যা হলো উকুনের আক্রমণ। চুলের উকুন হলে আপনি পুদিনার শেকড়ের রস লাগাতে পারেন এটি খুবই উপকারী। সম্পূর্ণ মাথায় চুলের গোড়ায় এই রস ভালো করে লাগিয়ে তারপর একটি পাতলা কাপড় পেঁচিয়ে রাখুন। একঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি প্রতিনিয়ত সপ্তাহে অন্তত দুবার একটি করা যায় তাহলে এক মাসের মধ্যেই আপনার চুল হবে উকুন মুক্ত।

খ। রোদে পুড়ে যাওয়া ত্বক রক্ষায়

পুদিনা পাতার রস এবং অ্যালোভেরার রস একসাথে মিশিয়ে 15 মিনিট রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন রোদে পোড়া ত্বকের জ্বালায় কমাতে এই মিশ্রণটি খুবই কার্যকরী আপনি কিছু দিনের মধ্যেই দেখবেন সানবার্নের জ্বালা পুরোপুরি চলে গিয়েছে। 

গ। ত্বকের যত্নে পুদিনা পাতার উপকারিতা 

পুদিনা পাতার মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার ‘স্যালিসাইলিক এসিড’ যা পুদিনা পাতার ব্রণ দূর করে এবং ত্বক পরিষ্কার করতে এটি কার্যকরী। পুদিনাপাতা আমাদের মানব দেহের মৃতকোষ দূর দূর করে এবং অপুষ্টিতে ভোগা কোষ স্বাভাবিক করতে পুদিনা পাতা ভালো কাজ করে। 

ঘ। ব্রণ এবং ত্বকের সৌন্দর্যে পুদিনা পাতার উপকারিতা

আগেই আমরা জেনেছি পুদিনা পাতায় থাকা ‘স্যালিসাইলিক এসিড’ কিভাবে আমাদের ব্রণ দূর করতে সহায়তা করে।  কিন্তু ব্রণ দূর হয়ে গেল ব্রণের দাগ দূর হয় না। ব্রণের দাগ দূর করতে প্রতিদিন রাতে পুদিনা পাতার রস লাগান এবং সম্ভব হলে সারারাত অথবা ২-৩ ঘণ্টা রাখুন। একমাস এভাবে লাগালে ব্রণের দাগ পুরোপুরিভাবে উধাও হয়ে যায়।

আমাদের দেহের ত্বকের তেলতেলে ভাব কমাতে পুদিনা পাতা খুবই উপকারী। পুদিনা পাতার রস, গোলাপ, বাঁধাকপি,  শশার নির্যাস একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা অনেক বৃদ্ধি পায়। ত্বক মসৃণ হয়। 

 ঙ। ব্যাকটেরিয়া-জনিত রোগবালাই থেকে রক্ষায় পুদিনা পাতা 

গ্রীষ্মকালে আদ্রতার পরিমাণ বেশি থাকার দরুন ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ বালাই বেড়ে যায়। পুদিনা পাতার রস এক বালতি পানিতে ১০ – ১৫ চামচ মিশিয়ে স্নান করলে শরীরের ব্যাকটেরিয়া জনিত দুর্গন্ধের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। পুদিনা তে রয়েছে “অ্যাসট্রিনজেন্ট” যা ঘামাচি, এলার্জি ও ব্যাকটেরিয়া জনিত সমস্যা দূর করে। 

২। হজম সমস্যা দূরীকরণে পুদিনা পাতার ব্যবহার 

হজম সমস্যা দূরীকরণে কার্যকরী কিছু উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মেন্থল, ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট

খুবই কার্যকরী। পুদিনা পাতায় উপাদানগুলো যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায় এবং এরা প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করে। পুদিনা পাতায় থাকা এসেনশিয়াল অয়েল জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। পুদিনা পাতা যেমন আমাদের পাকস্থলী কে শীতল করে তেমনি অম্লীয় খাবার হজম করতে সাহায্য করে। আপনি টাটকা পুদিনা পাতা, লবণ, জিরা, শুকনো খেজুর, গোলমরিচ এবং কালো আঙ্গুর যথেষ্ট পরিমাণে মিশিয়ে একসাথে চাটনি তৈরি করতে পারেন এবং এই চাটনির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে খাবারের বিষাদ দূর হয়ে যায়। খাদ্যে রুচি আসে এবং হজম শক্তি বাড়ে। যারা পেটের নানান সমস্যায় ভুগে থাকেন তারা খাবার খাওয়ার পর ১ চা চামচ পুদিনা পাতার চা খাওয়ার অভ্যেস করতে পারেন ৬-৭ টি পুদিনা পাতা গরম পানিতে মিশিয়ে সহজেই এই চা তৈরি করা যায়। 

৩। মানসিক স্বাস্থ্যে পুদিনা পাতার উপকারিতা 

সুগন্ধিভিত্তিক চিকিৎসায় পুদিনা পাতা প্রথম সারির উপাদান। এর কড়া সুগন্ধ মানসিক চাপ, হতাশা দূর করে শরীরকে চনমনে করে তোলে। রক্তে ‘কর্টিসল’ হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক‌রে জৈবিক মানসিক চাপ সামাল দেওয়ার ক্ষমতাকে সক্রিয় করার মাধ্যমে এই কাজটি হয়। আবার পুদিনা পাতার ‘এসেন্সিয়াল অয়েল’য়ে ঘ্রাণ তাৎক্ষণিক রক্তে ‘সেরোটনিন’ হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোনও মানসিক অস্থিরতা ও হতাশা কমায়।

৪। ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

পুদিনা হলো একটি অ্যারোমেটিক হার্ব অর্থাৎ এটি একটি গন্ধযুক্ত গাছ যা ওজন কমাতেও সাহায্য করে। পুদিনায় থাকা অনেক এনজাইমগুলোর একটি হল ‘’এসেন্সিয়াল অয়েল’’ যা পচনকারী উৎসেচক গুলোর একটি। নিয়মিত পুদিনা পাতা খেলে বাইরে প্রবাহ বাড়ে এবং হজমশক্তি আরো উন্নত হয়। এটি আমাদের মানব দেহকে সক্রিয়ভাবে পুষ্টিগুণ শোষণে সাহায্য করে। যখন শরীরে পুষ্টি এবং আত্তীকরণ বেড়ে যায় তখন বিপাকের হাড় বাড়ে এবং বিপাকের হাড় বাড়লে ওজন হ্রাস পায়।

৫। মৌসুমী রোগের চিকিৎসায় পুদিনা পাতার উপকারিতা

 আমরা অনেকেই জানি না যে আমরা যে সকল ভেপর রাব,ইনহেলার ব্যবহার করে থাকি তার মধ্যে রয়েছে পুদিনা পাতার নির্যাস। পুদিনা পাতার নির্যাস আমাদের সর্দি, জ্বর, ঠান্ডা, নাক বন্ধ ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাছাড়া পুদিনা পাতা আমাদের মৌসুমী বায়ু জনিত কাশি কমাতে এবং গলার অস্বস্তি দূর করতে খুবই উপকারী। 

৬। মানসিক স্বস্তিতে পুদিনা পাতার ব্যবহার

পুদিনা পাতার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে সুগন্ধি ভিত্তিক চিকিৎসায় এবং সুগন্ধি ভিত্তিক প্রসাধনী উৎপাদনে পুদিনা পাতা ব্যবহার করা হয়। এটির সুগন্ধি আমাদের হতাশা দূর করে শরীরকে চনমনে করে এবং আমাদের মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। আমাদের রক্তে থাকা ‘’কার্টিসল’’ আমাদের মানসিক অবসাদ থেকে দূর করে, তাকে সক্রিয় করতে পুদিনা পাতা কার্যকরী। আবার পুদিনায় থাকা এসেন্সিয়াল অয়েল ঘ্রাণ তাৎক্ষণিক আমাদের শরীরে সেরোটোনিন হরমোন নিঃসরণ করে। এটিও উচ্চ রক্তচাপ কমানো, অস্থিরতা ও হতাশা কমাতে সাহায্য করে। 

৭। মূত্রাল্পতা নিরাময় পুদিনা পাতার উপকারিতা 

অনেক রোগের ক্ষেত্রে আমাদের প্রস্রাব ঘাটতির সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু ঠান্ডা গরমের মৌসুমের পরিবর্তনের কারণে যাদের অল্প অল্প প্রস্রাব হয় তারা পুদিনা পাতা ৮/১০ গ্রাম পুদিনা পাতা বেটে সামান্য লবণ মিশিয়ে সাথে কাগজি লেবু এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে শরবত তৈরি করে দিনে ২/৩ বার খেতে পারেন অন্য কোন রোগের কারণে প্রস্রাবে সমস্যা হলে এটি ব্যবহার করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। 

আমরা জানলাম পুদিনা পাতা আমাদের কি কি উপকারে আসতে পারে ও পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম এবং পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা। তাছাড়া পুদিনা পাতায় রয়েছে মনোটারপিন নামক উপাদান যা আমাদের ফুসফুস, লিভার, কোলন, ত্বক,স্তন এবং প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার পর্যন্ত প্রতিরোধ করে। তাই এই গ্রীষ্মকালে গরমের আবহাওয়া থেকে বাঁচতে যেমন আমরা পুদিনা পাতা জুস খেতে পারি সাথে সাথে এটি আমাদের শারীরিক সুস্থতা প্রদানে সক্ষম। 

Leave a Comment