সরিষার তেলের উপকারিতা

সেই প্রাচীনকাল থেকেই সরিষার তেল আমাদের ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। সরিষার তেল যেমন আমাদের খাদ্য রসিক বাঙালির জন্য খুবই প্রয়োজনীয় তেমনি এর ঔষধি গুনাগুন সমূহ অনেক কার্যকরী। সরিষার তেল আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রে সেই প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। সরিষার তেল পাচক রস উৎপাদন করে এবং আমাদের হজম প্রক্রিয়া দ্রুত করতে সাহায্য করে। সরিষার তেলে রয়েছে ১৯২৭ ক্যালোরি এবং এককাপ সরিষার তেলে থাকে ২১৮  গ্রাম চর্বি। তাছাড়া সরিষার তেলের রয়েছে ওমেগা, ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, প্রোটিন এবং পরিমাণমতো ভিটামিন এ। 

সরিষার তেলে থাকা মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, এবং প্রদাহ বিরোধী  উপাদানে সমৃদ্ধ। সরিষার তেল এন্টিঅক্সিডেন্ট এর একটি বড় ভান্ডার যার কারণে আমরা আচার তৈরিতে এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে সরিষার তেল ব্যবহার করে থাকি। ভোজন রসিক বাঙালিরা শুধুমাত্র হরেক রকমের ভর্তা তৈরিতে সরষের তেল ব্যবহার করে থাকে কিন্তু আজ আমরা জানবো এই সরিষার তেলের পুষ্টিগুন যা আমাদের অনেক গুরুতর রোগ বালাই হতে নিজেদের সুরক্ষায় কাজে দেবে। 

সরিষার তেলের উপকারিতাঃ

১। চুলের জন্য সরিষার তেলের উপকারিতা

সরিষার তেলের উপাদান গুলোর মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো ফ্যাটি এসিড। ফ্যাটিএসিড প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে এবং চুল সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও চুল দ্রুত বাড়তে সাহায্য করে। যদি নিয়মিত সরষের তেল চুলে মালিশ করা হয় এবং প্রতি রাতে সরষের তেল মালিশ করলে চুলের গোড়া মজবুত হয। ফলিকল শক্ত হয়ে চুল পড়া বন্ধ হয়। তাছাড়া চুলে থাকা বিটা-ক্যারোটিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, মিনারেল চুল লম্বা করতে সাহায্য করে। নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া এবং পেকে যাওয়া চুলে নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহার করলে চুল ঘন এবং কালো হয়। 

২। সরিষার তেল দিয়ে রূপচর্চা

সরিষার তেল দিয়ে রূপচর্চা সেই প্রাচীনকাল থেকেই আমরা করে আসছি। সরিষার তেল নিয়মিত ব্যবহারে আমাদের ত্বকের তামাটে ভাব দূর হয়। সরিষার তেল, বেসন এবং লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে রাখলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া ত্বকের ডার্ক স্পট কমাতে এটি খুবই উপকারী। এটি আমাদের ত্বকের সুরক্ষা করে এবং দূষিত পদার্থ দূর করে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। 

৩। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরিষার তেলের উপকারিতা

সরিষার তেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ঝাঁঝালো উপাদান আমাদের শরীরের  শ্লেষ্মা এবং আমাদের মানবদেহে জমে থাকা জমে থাকা সাইনাস পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। যদি রসুন এবং লবঙ্গ দিয়ে সরিষার তেল গরম করে পায়ে এবং বুকে মালিশ করা হয় তাহলে সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

৪। লোহিত রক্তকণিকার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরিষার তেল

আমাদের মানব দেহের কোষ ঝিল্লি, কোষের লিপিডস এবং প্লাজমা ইত্যাদি কার্যকলাপ সম্পাদনের জন্য সরিষার তেল খুবই কার্যকরী। সরিষার তেলে থাকা প্রয়োজনীয় চর্বিগুলো আমাদের কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে এবং লোহিত রক্তকণিকা কে শক্তিশালী করে।

৫। ক্যান্সার প্রতিরোধের সরিষার তেলের উপকারিতা

 সরিষার তেলে থাকা একটি অ্যান্টিকারসিনোজেন উপাদান গ্লূকোজ আমাদের শরীরের টিউমারের গঠন প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাছাড়া সরিষার তেলে থাকা ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস কোলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা প্রদানে সরিষার তেল খুবই উপকারী। সরিষার তেল আমাদের মলাশয়ের ক্যান্সার এবং অন্ত্রের ক্যান্সার রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। 

সরিষার তেলের অনেক উপকারী গুণ রয়েছে। একটি ডিকঞ্জেস্টেন্ট বা শ্বাসতন্ত্র পরিষ্কারক ।আপনি সরিষার তেল এর সাথে রসুন মিশিয়ে বুকে লাগালে জমে থাকা কফের সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। তাছাড়া এতে থাকা পলিআনস্যাচুরেটেড এবং মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আমাদের ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বংস করে। হৃদরোগের ঝুঁকি ৭০ পার্সেন্ট কমিয়ে আনে। এজমা জনিত সমস্যার কারণে শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা কমে গেলে সরিষার তেল ভালোভাবে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায় এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা সব সময় খাঁটি সরিষার তেল ব্যবহারে সচেতন হই। কারণ সরিষার তেল খাঁটি না হলে এতে থাকা নানা ধরনের ভেজাল থাকে এবং এতে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়। সর্বোপরি স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় বেশি। 

Leave a Comment